October 22, 2024, 7:21 am

তালতলীতে বদ্ধ রুমে ছাত্রকে পেটালেন শিক্ষক

তালতলীতে বদ্ধ রুমে ছাত্রকে পেটালেন শিক্ষক

বিপ্লবী ডেস্ক ॥ বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করায় বরগুনার তালতলীতে এক স্কুলছাত্রকে ঘরের দরজা বন্ধ করে পিটিয়েছেন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টারে এ ঘটনাটি ঘটে। আহত স্কুলছাত্র উপজেলার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জানা যায়, উপজেলার লাউপাড়া বাজারে ‘সাকসেস কোচিং সেন্টার’ নামের একটি কোচিং খোলেন স্থানীয় ছগির হোসেন। যার সরকারি কোনো অনুমতি নেই। সেখানে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রসহ ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়। এই কোচিং সেন্টারে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় ছগির হোসেন একাই শিক্ষকতা করেন। মাঝে মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে তাঁর নিচের শ্রেণির প্রাইভেট পড়ানো হয়। এই কোচিং সেন্টারে প্রায় দেড় মাস আগে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধর করা হয়। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরালের পরপরই সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই ভিডিও ভাইরালের পরপরই একের পর এক ছাত্র-ছাত্রীরা নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন। আহত স্কুলছাত্র বলে, ‘প্রায় দেড় মাস আগে আমার ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে দুষ্টুমি করি। দুষ্টুমি করার পরে প্রাইভেট শিক্ষক ছগির স্যারের ভয়ে আমি তিন দিন যাবৎ কোচিং সেন্টারে যাইনি। তার পরে প্রাইভেটের বড় ভাইদের দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে একটি রুমে আটকানো হয়। এরপর ছগির স্যার ১০টি বেত নিয়ে আসে। প্রায় আধঘণ্টা যাবৎ আমাকে পেটাতে থাকে। আমি স্যারের হাতে-পায়ে ধরলেও আমাকে বেধড়ক মারধর করে। এই আধা ঘণ্টায় ৭টি বেত ভেঙে ফেলেছেন। বেধড়ক মারধর করায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে ছেড়ে দেয় ও একটি রুমে আটকে রাখে। জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধরের ভয় দেখানো হয় যাতে এই বিষয়টি কাউকে না বলি। পরে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে আমাকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। আমি স্যারের ভয়ে এত দিন মুখ খুলিনি, তারপর দেখি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোচিং সেন্টারের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের কারণে অকারণে এভাবেই নির্যাতন করা হইতো। ছগির স্যারের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস পাইনি। সাকসেস কোচিং সেন্টারের মালিক ও অভিযুক্ত শিক্ষক ছগির হোসেন বলেন, ‘ওই ছাত্র দুষ্টুমি করার পরে আমি বেত দিয়ে ১৪০টি পিটুনি দিছি। সেটা কে বা কারা ভিডিও করেছে তা আমি দেখিনি। ভাই এ বিষয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) নিউজ করার কোনো দরকার নেই। আপনাদের সাথে তালতলী এসে দেখা করব। এ বিষয়ে লাউপড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী বলেন, ‘ওই কোচিং সেন্টারে আমার এই বিদ্যালয়ের ছাত্রকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ভিডিওতে যেভাবে দেখেছি তাতে গরুকেও মানুষ এভাবে পেটায় না। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এ নিয়ে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) এস. এম সাদিক তানভীর বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমিও দেখেছি। খুবই দুঃখজনক বিষয় পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের ভেতরেও পড়ে। সে ক্ষেত্রে থানায় ওই ছাত্রের অভিভাবকেরা মামলা করতে পারেন। ওসি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন কোচিং সেন্টার অবৈধ। ওই অভিযুক্ত সগীরের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি পাশাপাশি নোটিশও করাব। বর্তমানে ওই শিক্ষক পলাতক আছেন। বের হলে ও কোচিং সেন্টার খোলা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © All rights reserved © 2024 DailyBiplobiBangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com